গ্রামের মেয়েরা সফল হয়না এমন কথা শুনা যায় কেন? গ্রামের মেয়েরা কি কম ক্রিয়েটিভ? তারা কি সংগ্রামের হাল স্পর্শ করে না? নাকি তারাও করে তবে বাস্তবতার কাছে হেরে যায়। গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মেয়ের চিন্তাভাবনা সে বড় হয়ে সংসার করবে আর সেটা করতে তার লেখাপড়াটা মুখ্য বিষয় নয়। তবে আমি অনেক মেয়ের কাছে থেকে তাদের মতামত জেনে এবং তাদের জিবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি। তাদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ নার্স কিংবা ডাক্তার হতে চায়। মেয়েরা তো সকল সেক্টরেই জব করতে পারে এবং নিজেকে সফল করার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। তাহলে তারা কেনো নার্সিং পড়তে চায়। এমন প্রশ্নের জবাবে তারা অনেকেই বলেন যে তারা মনে করে নার্সিং মানেই মেয়ে সেখানে নিরাপদ বোধ করাই হলো আসল বিষয়। আর ডাক্তারিও খুব ভালো পেশা তাই সেটাও তাদের কাছে নিরাপদ মনে হয়। যদিও শিক্ষকতা নিয়ে এখন অনেক মেয়েদের আকাংঙ্খা বেড়েছে। কিন্তু তারা মনে করে সেখানে তাদের সুযোগ কম। তবে তারা কেউ কেউ এটা জানে না যে দেশে নারী শিক্ষকের ঘাটতি এখনো অনেক, আশানুরূপ সরকার নারীদের সুযোগ বৃদ্ধি করেছে তাদের শিক্ষকতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তারপরও কেনো গ্রামের মেয়েরা এই ব্যাপারের সচেতন নয়। এর প্রধান কারন বাল্যবিবাহ, মেয়েরা মনে করে তারা অল্পশিক্ষা নিয়েই সমাপ্তি ঘটাতে বাধ্য সেখানে বড় সপ্ন কিংবা এটা নিয়ে সচেতন হবার কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। তাদের বাবা মা তাদের দ্বারা কোনো উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা দিবে না।
সর্বোচ্চ হলে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করাতে পারলেই বিয়ে দিয়ে দিবে তাই ভালো ছাত্রীর প্রতিযোগিতায় তারে নামে না। তারা লেখাপড়াকে এতো সিরিয়াস বিষয় হিসেবে নেয় না। তারা স্কুল-কলেজে কোনো প্রোগ্রাম কিংবা প্রতিযোগিতায় জোড়ালোভাবে সফলতার তাৎপর্য খুজে পায় না। তারা এইসব ছোট বিষয়কে জিবনের অংশই মনে করে না। আসলে এগুলোই যে আমাদের বড় সফলতা অর্জনের একটা বড় অভিজ্ঞতা। আমরা যে ছোট কাজগুলো করি সেটা থেকেই আমরা বুঝি আমি কতটুকো দায়িত্বশীল। আমি সঠিকভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে পারছি কিনা এটাই আমার বড় দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে। আমরা অনেক সময় ছোট কাজগুলো সময় মতো করি না বা করলেও সঠিকভাবে করি না বা সেটায় সফল না হলেও সেটা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু আমাদেরকে সেই ছোট বিষয়গুলোতেও জয় পেতে হবে। তবেই আমরা বড় ক্ষেত্রে বড় জয় পাবো।এবং জয়ের আনন্দ উপভোগ করবো। তবেই তার তাৎপর্য বুঝবো। গ্রামের মেয়েরা বাল্যবিবাহর কাছে হেরে না গিয়ে তাদের উচিত তাদের সপ্নকে ছোয়া। তাদের পথ অনেকটা সহজ। তারা অনেক মেধাবী। মেয়েরা যে কাজ করে সংসারে কিন্তু তারা কেনো তাদের জিবন যুদ্ধে অর্থাৎ সপ্ন পুরনে প্রবল ইচ্ছে নিয়ে মাঠে নামে না। কিন্তু গ্রামেরই কিছু ( যা সংখ্যায় খুবই কম) মেয়েদের দেখা যায় লেখাপড়া করতে তারা সংগ্রাম করে। শহরে আসে, লেখাপড়া করে, টিউশনি করে, জব করে, আবার কেউ পরিবার মাথায় নিয়েও পড়াশোনা করে। তবে এই সংখ্যাটা কম কেনো হবে। যে শহরে লেখাপড়া করে কষ্ট করে, নিজের খরচ নিজে তৈরি করে, আত্মা নির্ভরশীল হয়। এখানে অনেকে ধর্মের কথা বলে যে পর্দা করবে মেয়েরা সে লেখাপড়া করবে কেনো, চাকরি করবে কেনো। যারা এই কথা বলে তারা কি বলতে পারবে যে টিউশনি করে বা জব করে লেখাপড়া করা মেয়েটা বেশি পর্দা করে নাকি বাড়িতে থেকে বেকার থাকে সে বেশি পর্দা করে। আমি অনেক দেখছি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর মেয়েরা বাড়িতে থাকলে সে মোটামুটি বেকার সে না করে ভালো লেখাপড়া না করে পর্দা, না করে ভালো কোনো কাজ। বরং সে তার বোরিং সময় পার না করে বিভিন্ন খারাপ মস্তিষ্কের বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। অপরদিকে ঐ পড়ুয়া মেয়েটার মাথায় কোনো খারাপ বুদ্ধি কিংবা সেটা করারও সুযোগ থাকে না।সে ব্যাস্ত থাকে তার সপ্ন নিয়ে পুরনের প্রত্যাশায়। এখানে বলাই যায় যে ঐ শিক্ষিত মেয়েটা অবশ্যই পর্দা করে। নয়তো সে তার সপ্ন পূরনে বিধাতার সহয়তা পাবে না এই ভয় তার মনে সবসময় কাজ করে। সে আল্লাহ ভীরু হয়। কিন্তু অলস মেয়েরা কখনো এই চিন্তা করতে পারে না। তাই আমি এটাই বলবো গ্রামের মেয়েরা এটা থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছেন। তারা ব্যর্থ হন না। কারন তারা জিবন নামক সংগ্রামে নামেন না। তারা নিরুৎসাহিত তো বটেই। তবে তাদের বাবা মার এবং নিজের চিন্তাভাবনা ঘাটতি মূল বিষয়। জিবনে সংগ্রাম না করে অন্যর উপর বসে থাকা কোনো মানুষের ভাবনা হওয়া উচিৎ নয়। গ্রামের গার্ডিয়ানরা মনে করে মেয়েকে ভালো জামাই দেখে বিয়ে দিলেই হবে। এটা ভেবে মেয়েকে নিস্তেজ করে রাখে। এটা একধরনের পরলোভ, অন্যর সম্পদের লোভ। একটা সচেতন বাবা হিসেবে কিভাবে এটা করতে পারে আমার জানা নাই। তবে সকল বাবা মার উচিত তার মেয়েকে যোগ্য করা যাতে তার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয় এবং আত্মা নির্ভরশীল হয়। দোয়া করি সকল গার্ডিয়ানদের তারা এই ব্যাপারে শুধু ধর্মকে ব্যাবহার না করে সকল ব্যাপারে করবে এবং তারা সন্তানের প্রকৃত গার্ডিয়ান হবেন।
0 Comments
Welcome from our trending news. Thank you for your comment. We value your opinion. We write content with your feedback. I would be grateful if you would please follow me on my site