![]() |
| Pic:collected from Trending news bn page |
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অনেকের ইতিবাচক ও নেতিবাচক মত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি চলে আসছে বাংলাদেশের শুরু থেকেই। ১৯৪৮ সাল থেকে রাষ্ট্র ভাষা নিয়ে সোচ্চার হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ভুমিকাই ছিল মূখ্য। ছাত্ররাই বারেবারে আন্দোলন সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেয়। ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ এবং বেশ ত্যাগি, তাদের আন্দোলনে জনতার সমর্থন সবসময়ই থাকে। তারা কৌশলীএবং উদ্ভাবনী, তারাই আগামীদিনের ভবিষ্যতে, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তাদের হাতেই তুলে দিতে হবে। তাই তাদের সংগঠন পরিচালনা এবং তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তবে দেড় যুগ ধরে দেশের রাজনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পরে ক্ষমতাসীনদের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ২০১০ সাল থেকে দেশের রাজনীতিকে তাদের হাতিয়ার হিসেবে
ব্যবহার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ৩য় শ্রেণির কর্মচারীরাও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত। তারা একক সিদ্ধান্ত ব্যতীত নিজেদের জায়গা থেকে কোনো কথা বলতেও চায় না। এক কথায় বলা চলে তারা সরকারের গোলাম হয়েই কাজ করে চলছে।সর্বশেষ ২০১৯ সালে বুয়েটের আবরার ফাহাত হত্যাকান্ডর পরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বুয়েট থেকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানায়। বুয়েট প্রশাসন সেই দাবি মানতে বাধ্য হয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের কোটার পূর্ণবহালের চলবে না এমন দাবিতে রাজপথে কঠোর অবস্থান নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত কলেজসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং একপর্যায়ে শেখ হাসিনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা শাটডাউন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের সাথে কঠোর থেকে কঠোরতর হন। এতে আবু সাইদ, ওয়াসিম আকরাম সহ বেশ কয়েকজন শহীদ হন।তার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবীতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেন এবং একপর্যায়ে গনঅভ্যুত্থানের ডাক দেন। গনঅভ্যুত্থানে ডাকে সাধারণ জনতা সাড়া দিয়ে সকল রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ছাত্রজনতার তোপের মুখে পদত্যাগ করেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। এখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়করা দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের। তবে ভিবিন্ন রাজনৈতিক দলের মত ভিন্ন তারা চান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি থাকবে।কারন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই রাজনীতিবিদ তৈরি হবে।বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বন্ধ হলে দেশে রাজনীতি থাকবে না। এবিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের মতামত,
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি থাকবে না-না থাকবে এমন প্রশ্নই অপ্রাসঙ্গিক। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি থাকবে। কারন ইতিহাসের সকল আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নেতৃত্ব আসে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের মতামত নিয়ে একটা সুষ্ঠ ও সুন্দর রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করবো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি থাকবে তবে কিছু সংস্কার করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সচেতন হতে হবে তারা যেন কোনোভাবেই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত না হন।বিশ্ববিদ্যালয় বৈধ হলে শিক্ষার্থীরা থাকবে কেউ হল দখলের রাজনীতি করলে সেটা অবশ্যই মেনে নেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি থেকেই দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব তৈরি হবে তাই সকল শিক্ষার্থীকে এই ব্যাপারেও সোচ্চার হতে হবে। তারা যদি সচেতন না হন এবং প্রতিবাদী না হন তবে দেশ পরিচালনায় প্রভাব পড়বে।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনও একটি ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বেই হয়েছে।তাদের কৌশল এবং শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করা ইতিহাসে এক নতুন এরকম আমরা আর কোনোদিনও দেখি নাই। এত অল্পসময়েই এতবড় গনঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এই আন্দোলনে অনেক ছাত্র সংগঠনেরও ভুমিকা ছিলো বিশেষ করে ছাত্র শিবির, ছাত্রদল,ছাত্রঅধিকারসহ আরো অনেক ছাত্র সংগঠন সমানে এবং পিছনে ছিলো। আমরা যদি যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা,আরিচা মহাসড়কের কথা বলি এসব জায়গায় ছাত্রদল,ছাত্রশিবিররাও ছিলো। চট্টগ্রামের এক ছাত্রদল নেত্রী বলেন চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে আমরা ছাত্রদল সবসময় সামনে থেকে মেয়েদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমরা সবাই সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে রাজপথে ছিলাম।কারন আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগ। সেটা যাদের মাধ্যমেই হোক আমাদের দাবির সাথে এক তাই আমরাও রাজপথে ছিলাম। আমাদের দেশনায়ক তারেক রহমান আমাদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন আমরা ১২ বছর ছিলাম। তবে আমরা তখন ব্যর্থ হয়েছি এটা সত্যি, তখন আমাদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামতে পারে নাই।ওটা একটা রাজনৈতিক দলের সংগ্রাম ছিলো। এবার যেহেতু মানুষ সুযোগ পেয়েছে তাই আর হাতছাড়া করার কোনো সুযোগ নেই। এব্যাপারের চট্টগ্রাম কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যেহেতু রাজপথে নেমেই গেছি তাই আমরা হাসিনার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ থেকে উঠবো না।আমরা জানি আমরা তার (হাসিনা) হাত থেকে কেউই রেহাই পাবো না তাই আমাদের পথ একটাই সেটা হলো তার পদত্যাগ।
তাহলে ছাত্ররাজনীতি পক্ষে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কেন? উত্তরে ঢাবির এক ছাত্রী জানান, "বিশ্ববিদ্যালয় হল দখল, প্রশাসনের দলীয় টান এবং ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ হাসিলে ব্যাবহার করা হয় শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেতে বাধ্য করা হয় এটা আমাদের লেখাপড়ায় বেশ প্রভাব ফেলে। এখানে রাজনীতির চর্চা হয় না, হয় দখলদারিত্ব আর সন্ত্রাসী কার্যক্রম যা মোটেও আমাদের প্রত্যাশা নয় এবং অনিরাপদ।

0 Comments
Welcome from our trending news. Thank you for your comment. We value your opinion. We write content with your feedback. I would be grateful if you would please follow me on my site